রিমোট জব এর আদ্যপান্ত

রিমোট জব এর আদ্যপান্ত

আচ্ছা কেমন হয় যদি রোজ কষ্ট করে অফিসে যাওার পরিবর্তে বাড়ি থেকেই আপনার সমস্ত কাজ সম্পন্ন করতে পারেন, অথবা কথাও টুরে যেতে যেতে অফিসের টুকটাক কাজ এগিয়ে রাখতে পারেন? নিশ্চয় খুব ভালো হয়, হ্যাঁ এটাই মূলত রিমোট জব। Covid-19 পরবর্তি বিশ্বে যতগুলো ধারনা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে তার ভেতর রিমোট জব অন্যতম। রিমোট জব কী এর সম্ভবনা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে যারা জানতে আগ্রহি তাদের জন্য Cloud BPO এর আজকের আয়োজ

রিমোট জব এর আদ্যপান্ত

আজকে আমরা জানব-

  • রিমোট জব কী?
  • রিমোট জবের প্রকারভ ।
  • রিমোট জবের সুবিধা।
  • রিমোট জবের সীমাবদ্ধ ।
  • রিমোট জবের জন্য প্রয়জনীয় দক্ষতারিমোট জব আবেদন করতে কি কি লাগবে ?
  • কোথা থেকে পাবেন রিমোট জব?
  • ফ্রিল্যান্সিং এবং রিমোট জবের পার্থক্য।

রিমোট জব কী?

রিমোট শব্দের অর্থ দূরবর্তী এবং জব  অর্থ  কাজ সুতরাং বলা যায় রিমোট জব হচ্ছে “দূরবর্তী কাজ” অর্থাৎ এমন একটি চাকরি, যেটা  নির্দিষ্ট অফিসের গণ্ডির বাহিরে থেকে করা হয়।  একটা সময় ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে রিমোট জবকে গুলিয়ে ফেলা হত। এখন এই ধারনা অনেকটাই পালটেছে। পরিচালন খরচ কম হওাতে এখন প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলা ঝুকছে রিমোট জবের দিকে । অন্যান্য চাকরিগুলোতে যেমন নির্দিষ্ট সময় ঠিক করা, যে কোন সময় থেকে কোন সময় অফিসে যেতে হবে ঠিক তেমনি রিমোট জবেও সময় নির্ধারিত থাকে। প্রয়োজনীয় মিটিং সহ অন্যান তথ্য আদান প্রধান অনলাইনে গুগল মিট অথবা জুমের মাধ্যমে করা হয়। এক কথা অফিসের কাজ সরাসরি অফিসে উপস্থিত না থেকে ভার্চুয়ালি করা হয়। এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের যে কোন দেশে উচ্চ বেতনে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

রিমোট জবের প্রকারভেদ

কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকার রিমোট জব হয়ে থাকে যেমনঃ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, ডেভেলপার, একাউন্টিং বুককিপার, গ্রাফিক ডিজাইনার, কাস্টমার সার্ভিস জব, ডাটা এন্ট্রি, কোডিং এবং ট্রান্সক্রিপশন জব, রাইটার, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার ইত্যাদি। তাছাড়া সময়ের ভিত্তিতে রিমোট জব কে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথাঃ পূর্ণকালীন জব ও খন্ডকালীন জব। একজন তার দক্ষতা ও পছন্দ অনুসারে যেকোন সেক্টর বেছে নিতে পারে।

রিমোট জবের সুবিধা

রিমোট জব সাধারণত নিয়োগকর্তা এবং কর্মী উভয়ের জন্যই লাভজনক হওয়াতে দিন দিন এর ব্যাপক প্রসার লক্ষ করা যাচ্ছে। নিয়োগ কর্তার দিক থেকে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো পরিচালন খরচ হ্রাস করে নীট আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয় এবং কর্মীদের জন্য প্রধান সুবিধা যাতায়াতের ঝামেলা থাকেনা তাছাড়া কাজের স্বাধীনতা পাওাযায়। যেহেতু যাতায়াতের ঝামেলা নেই তাই অনেকটা সময় সেভ হয় যেটা অন্য কোন প্রডাক্টিভ কাজে ব্যয় করে বাড়তি আয় করা যায়। বিশেষ করে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের জন্য রিমোট জব বেশ কার্যকর এবং সুরক্ষিত । যারা গৃহিণী কিংবা বাসা থেকে বের হতে সমস্যার সম্মুখীন হন, তাদের জন্য রিমোট জব খুব কার্যকরী। কারণ, ঘর থেকে বের না হয়ে তারা অর্থ উপার্জন করতে পারবে।

রিমোট জবের সীমাবদ্ধতা

রিমোট জবের যেমন অনেক সুবিধা রয়েছে তেমনি কিছু অসুবিধাও বিদ্যমান যেমনঃ

১। বিচ্ছিন্নতা এবং একাকীত্বঃ রিমোট জবের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল বিচ্ছিন্নতা এবং একাকীত্বের সম্ভাবনা। রিমোট ওয়ার্কাররা অফিসে কাজ করার সাথে আসা সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার অভাব বোধ করে থাকে এবং তাদের সহকর্মীদের এবং কোম্পানির সংস্কৃতির সাথে মানিয়ে নিতে স্ট্রাগল করে।

২। পারষ্পারিক সহযোগিতার অভাবঃ  রিমোট জব পারষ্পরিক সহযোগিতা এবং যোগাযোগকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। সামনাসামনি অফিস করাতে পারষ্পারিক সহযোগিতা এবং আন্তরিকতা যেভাবে বৃদ্ধি পায় রিমোট ওয়ার্কে সে সুযোগ কম।

৩। কাঠামো ও জবাবদিহিতার অভাবঃ অফিসের পরিবেশের কাঠামো এবং রুটিন ছাড়া, কর্মীরা কাজ চালিয়ে যেতে এবং কার্যকরভাবে তাদের সময় পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে পারে।

৪। প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জঃ রিমোট জব প্রযুক্তির উপর অনেক বেশি নির্ভর করে এবং প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলি কাজের পথে একটি বড় বাধা হতে পারে। কর্মীরা ইন্টারনেট সংযোগ সমস্যা, হার্ডওয়্যার বা সফ্টওয়্যার ত্রুটি, বা অন্যান্য প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে যা তাদের কাজকে ব্যাহত করতে পারে।

রিমোট জবের জন্য প্রয়জনীয় দক্ষতা।

রিমোট জব পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে সেই বিষয়গুলো এগিয়ে রাখবে, চলুন সেই সম্পর্কে কিছু জানা যাক।

প্রথমত দরকার আত্মবিশ্বাস, মৌখিক যোগাযোগ (oral communication), রাইটিং, এ দুটি কাজে নিখুঁত হতে হবে, ডিজিটাল প্রযুক্তি বা “google tool” সঠিকভাবে পরিচালনা করা জানতে হবে। যেমন: zoom , google meet, সমস্যা সমাধান (problem solving) স্কিল নিখুঁত হতে হবে এবং সৃজনশীল দক্ষতা থাকতে হবে।

আর আপনার উপরে রিমোট জবের মধ্যে পড়ে এমন যেকোন একটা স্কিল ভাল ভাবে শিখতে ও আয়ত্ব করতে হবে।

রিমোট জব আবেদন করতে কি কি লাগবে ?

 রিমোট জবের ক্ষেত্রে ভাল মানের একটি সিভি খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ অবশ্য যেকোন জবের ক্ষেত্রেই এটি প্রয়োজন।রিমোট জবের জন্য অবশই আপনার প্রজনীয় স্কিল থাকতে হবে যা উপরে আলোচনা করা হয়েছে। রিমোট জব পেতে অন্যান্য জবের মতই নিয়োগকর্তা বরাবর আবেদন করতে হবে তিনি উপযুক্ত মনে করলে আপনাকে ভার্চুয়াল ইন্টারভিউ এর জন্য ইনভাইটেশান পাঠাবেন।

কোথা থেকে পাবেন রিমোট জব?

ফেসবুক, টুইটার সহ লিংকড ইন খুবই জনপ্রিয় সোসিয়াল মিডিয়া প্লাটফর্ম যেখানে ভাল রিমোট জব পাওয়া সম্ভব। এছাড়া শুধু জবের জন্য রয়েছে, Indeed, Glassdoor, RemoteHub, Angellist সহ বিশ্বের বিভিন্ন সাইট, যেখান থেকে খুব সহজে রিমোট জবে এপ্লাই করা যায় তাছাড়া Up work, Fiverr এর মত মার্কেটপ্লেসেও রিমোট ওয়ার্কারের জন্য জব পোষ্ট পাওাযায় এর যে কোন একটি সোর্স থেকে নির্দিষ্ট পোষ্টের জন্য আপনি আবেদন করতে পারেন

ফ্রিল্যান্সিং এবং রিমোট জবের পার্থক্য।

সর্বশেষ জেনে নিই ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে রিমোট জবের কি পার্থক্য আছে? কাজের ধরনঃ ঘরে বসে কোন কোম্পানি অথবা কোন প্রতিষ্ঠানে বেতনভিত্তিক ফুলটাইম/ পার্ট টাইম কাজ করেন তাহলে সেটাকে রিমোট জব বলা হয়। অপরদিকে কোন ক্লায়েন্টের সাথে নির্দিষ্ট শর্তে চুক্তিভিত্তিক যেকোনো কাজ করে দেওয়া হল ফ্রিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সিং এর অর্থ হলো মুক্তপেশা আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করেন তাহলে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন, তবে রিমোট জবে আপনাকে কোম্পানির নিয়ম নীতির মধ্যে থেকে কাজ করতে হবে।

উপসংহারঃ 

প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ মানুষের জীবনযাত্রা ও কর্মের ধরণে আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান বিশ্বে রিমোট জবের ধারনাটি দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে । এখন মানুষ ঘরে বসেই বিশ্বের যে কোন দেশের প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে যা চাকুরির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে তাই পরিবর্তিত বিশ্বে এক ধাপ এগিয়ে থাকতে হলে প্রযুক্তিকে ভালো ভাবে  রপ্ত করার কোন বিকল্প নেই।

1 Comment

Ashiqur Rahman

রিমোট জবের সম্পর্কে একটা বিস্তারিত ধারণা দেবার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

whatsapp