আপনি কি স্নাতক শেষ করেও যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরি পাচ্ছেনা ? অনেক পরিশ্রম করছেন ইংরেজি পারেন, নির্দিষ্ট সেক্টরে ভালো জ্ঞান আছে, নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারেন কিন্তু তারপরেও নিজেকে প্রমাণ করার জন্য উপযুক্ত সুযোগ পাচ্ছেন না? যদি আপনার উত্তর হ্যাঁ হয় তবে বিপিও খাত হতে পারে আপনার জন্য বিপুল সম্ভাবনাময় একটি কর্মক্ষেত্র। Cloud BPO এর আজকের আয়োজনে আজকে আমরা জানব BPO কী এবং কীভাবে এটি চাকুরির ক্ষেত্রে বড় সুযোগ তৈরি করতে পারে।
এই ব্লগ থেকে আমরা যা যা জানতে পারব-
- বিপিও কি?
- বাংলাদেশ ও বিশ্ব বাজারে বিপিও র অবস্থান
- বাংলাদেশে বিপিওর যাত্রা
- বিপিও এর ধরণ
- বাংলাদেশে বিপিওর সম্ভাবনা
- বিপিও তে কাজ করার যগ্যতা
- বিপিও যাদের জন্য ভালো সুযোগ হতে পারে
- প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন
বিপিও কি?
BPO বা বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং ( Business Process Outsourcing) বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে একটি দ্রুত সম্প্রসারনশীল এবং সম্ভাবনাময় ব্যবসা ও আত্মকর্মসংস্থানের উপায়। । BPO নামটা বিশ্বজুড়ে খুব পরিচিত। আউটসোসিং বলতে কেবল কল সেন্টার আউটসোসিং নয়। ব্যাবসা পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে করার বিষয়টি সাধারণভাবে বিপিও বলে পরিচিত। বর্তমান যুগে এই খাতটি যে কোন শিক্ষিত তরুণ যুবকের কর্মসংস্থানের এক চমৎকার সুযোগ হতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে দেশের প্রথম খাত হিসেবে তৈরি পোশাক শিল্প প্রধান ভূমিকা রেখে আসছে। তবে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি এবং বিশ্বব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তনের কারণে এটা বর্তমানে অনেক চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাড়িয়েছে। COVID-19 পরবর্তি সময়ে বিশ্বব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন এসেছে। মানুষ বুঝতে পেরেছে কেবল গতানুগতিক ব্যবসায়পদ্ধতি টেকশই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারেনা। বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টেছে পেশার ধরণও। এমনই এক পেশা বিপিও বা আউটসোর্সিং ভিত্তিক ব্যবসা।
বাংলাদেশ ও বিশ্ব বাজারে বিপিও র অবস্থান।
বিশ্বের সবচেয়ে ক্রমবর্ধমাণ ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে এই বিপিও খাত। আইসিটিতে বর্তমানে বাংলাদেশের যে পরিবর্তনের গল্প, তার উল্লেখযোগ্য অবদান হচ্ছে বিপিও খাত এর। ২০২৩ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী এ খাতে বিশ্বের বর্তমান বাজার ২৮০.৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৯.৪০% বাংলাদেশের এ খাত থেকে বার্ষিক আয় মাত্র ৭০০ মিলিয়ন ডলার যার ভেতর ৩০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক আয়। এ খাতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২২%।
বাংলাদেশের খুব কম সংখ্যক মানুষ এই সম্ভবনাময় খাত সম্পর্কে অবগত তবে সরকার আসন্ন ২০৩০ অর্থবছর পর্যন্ত এ খাতে বৈদেশিক আয় ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নিত করতে ব্যপক কর্মতৎপরতা শুরু করেছে যার ফলে এ দেশে BPO খাত দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে
বাংলাদেশে বিপিওর যাত্রা।
দেশে কল সেন্টার ও ডাটা এন্ট্রির মাধ্যমে বিপিওর ধারাটির সূচনা ঘটে। প্রথমে ছোট আকারে শুরু হলেও সময়ের পরিক্রমায় এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে বর্তমানে এটি বেশ বড় আকারের ধারণ করেছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাটির পৃষ্ঠপোষকতা করার কারণে এ ব্যাপারে নতুন একটি জাগরণ তৈরি হয়েছে যা বিপিও মার্কেট কে দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে। ২০১৮ সালে যেখানে বিপিও থেকে আয় ছিল ৩০০ মিলিয়ন ডলার মাত্র ৫ বছরের মাথায় তা বেড়ে ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। বর্তমানে ৫০০০০ এর বেশি মানুষ এ সেক্টরে কর্মরত আছেন।
বিপিও এর ধরণ।
বিপিওতে দুধরণের কাজ হয়ে থাকে। একটি হলো ভয়েসের মাধ্যমে, আরেকটি লিখিত কাজ। বর্তমানে বাংলাদেশে ভয়েসের মাধ্যমেই বেশি কাজ করা হয়ে থাকে কল সেন্টার বা কাস্টমার কেয়ার সেন্টার এর একটি উদাহরণ। যারা বিপিওতে ভয়েসের মাধ্যমে কাজ করে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ধরাবাধা কোনো নিয়ম নেই, এখানে অল্প শিক্ষিতরাও কাজ করতে পারে। আর যারা লিখিত বিষয় নিয়ে কাজ করে তারা শিক্ষিত হলে এগিয়ে যাওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে Cloud Accounting, Programming, Web development, Graphic Design ইত্যাদি নানা সেক্টর এর উদাহরণ।
বাংলাদেশে বিপিওর সম্ভাবনা।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে বিপিও খাতে এদেশে একটি বিশাল বাজার পড়ে আছে। এখন যদি বাংলাদেশ এই খাতে নজর দেয়, তাহলে তৈরি পোশাক শিল্পের পরই বিপিও হবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় খাত। এখন প্রয়োজন প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের তরুন দের গড়ে তোলা এবং বিপিওকে খাতের সুযোগ ও সম্ভবনা বর্ননা করে তরুণ প্রজন্মের কাছে বিপিও কে আরও জনপ্রিয় কর তোলা।
বর্তমানে প্রযুক্তিগত বিশ্বের নেতৃত্বে থাকা পশ্চিমা বিশ্ব আমেরিকা, যুক্তরাজ্য সহ চীন, জাপান ও দক্ষিন কোরিয়ায় প্রতিদিন ব্যপক হারে দক্ষকর্মীর চাহিদা সৃস্টি হচ্ছে কিন্তু তাদের সেই জনগোষ্ঠী নেই। জাপানে ৫০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর বয়স ৫০ এর ঊর্ধে। ইউরোপ, আমেরিকাতেও তাদের তরুণ প্রজন্মের সংকট বিরাজ করছে। উন্নত বিশ্বে, বিশেষ করে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও কোরিয়ায় শ্রমশক্তি হ্রাস পাওয়ায় বাংলাদেশের জন্য দরজা খুলে গেছে, এই মহূর্তে বাংলাদেশ যদি তার বিপুল সংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠীকে সঠিক প্রশিক্ষণ দিতে পারে তাহলে আগামী ৫ বছরে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপানের বাজার আমাদের তরুণরাই নিয়ন্ত্রণ করবে। ২০২৫ সালের মধ্যেই বিপিও খাত থেকে বাংলাদেশ ২ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিপিও তে কাজ করার যগ্যতা।
খণ্ডকালীন চাকরির জন্য আবেদন করতে আবেদনকারীকে বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজে অনার্স বা ডিগ্রি পড়ুয়া হতে হবে। পূর্ণকালীন চাকরি করতে আবেদনকারীকে কমপক্ষে স্নাতক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কাজের কোনো অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি আবেদনকারীকে শুদ্ধ করে বাংলা ও ইংরেজিতে কথা বলা, সুন্দর উপস্থাপনা, কম্পিউটার ব্যবহার সম্পর্কে মৌলিক ধারণা থাকা, স্মা্ট, উপস্থিত বুদ্ধি, বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি বাড়তি যোগ্যতা থাকা দরকার। যে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার মানুষ এখানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এই খাতে যারা কাজ করবেন, তাদের মাত্র দুটি যোগ্যতা থাকা দরকার। প্রথম যোগ্যতা হলো ‘অ্যাবিলিটি টু লার্ন’ অর্থাৎ আমি জানি না, জানতে চাই এই মনোভাব থাকতে হবে। দ্বিতীয় যোগ্যতা –কমিউনিকেশন স্কিল তথা যোগাযোগের দক্ষতা।
বিপিও যাদের জন্য ভালো সুযোগ হতে পারে।
সব বয়সীদের এ সেক্টরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বিপিও তে খণ্ডকালীন ও পূর্ণকালীন কাজের সুযোগও আছে তাই ছাত্র অবস্থাতেই পড়ালেখার পাসাপাসি বিপিও সেক্টরে কাজ করে নিজের খরচ যেমন বহন করা যায় তেমনি স্কিল অর্জনের মাধ্যমে ক্যারিয়ারেও এগিয়ে থাকা যায়। চাইলে চাকুরির পাসাপাসি এ খাতে কাজ করে বাড়তি আয় করা যায়। আমাদের দেশের শিক্ষিত নারীদের একটি বিরাট অংশ কোন চাকুরি করেন না অথবা সুবিধা মত চাকুরি পায়না বিপিও হতে পারে তাদের জন্য একটি ভালো সুযোগ যাতে তারা ঘরে বসেই নির্দিষ্ট কাজ করে ভালো মানের অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন।
শিক্ষা বিষয়ক জরিপ ২০২৩ অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮ লক্ষ ৮০ হাজার শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি লাভ করছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে এদের একটি বড় অংশ কোন কাজই পাচ্ছেনা অথবা খুবই সামান্য বেতনে পোষাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। সঠিক গাইডলাইন ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এদের বিরাট অংশকে বিপিও সেক্টরে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব।
বিপিওতে যারা কাজ করছে, বা করতে আগ্রহী তাদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য CloudBPO নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে । এটি যুক্ত্যরাজ্যের প্রফেশনাল হিসাববিদ দের দ্বারা সরাসরি পরিচালিত বাংলা ভাষাভাষী দের দক্ষতা উন্নয়নের একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান। যারা আপনাকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও গাইডলাইন দেওয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য প্রস্তুত করে তুলবে। বিস্তারিত জানতে সরাসরি যোগাযোগ করুন।
উপসংহার
বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে একটি ব্যপক সম্ভাবনাময় খাত হলো এই বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা BPO, বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত তরুন কে যদি প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে এ খাতের অন্তর্ভুক্ত করা যায় তবে এটি এ দেশের অর্থনীতিতে ব্যপক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। সব শেষ বলতে হয় বিশ্বব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তনের সাথে নিজেকে আপডেট করতে না পারলে কখনোই পরিবর্তনের সাথে সৃষ্ট সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন না। তাই শিখতে থাকুন নতুন কিছু বিশ্ব রাখুন হাতের মুঠোয়।
Ashiqur Rahman
আপনাদের প্রতিটা ব্লগ থেকেই নতুন কিছু জানতে পারি, ধন্যবাদ ক্লাউড বিপিওর জন্য শুভকামনা।